“সকল প্রাণী সুখী হোক, শান্তিতে বাস করুক” — এই চিরন্তন শুভাশিষ বয়ে আনে বুদ্ধ পূর্ণিমা।
এটি কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব নয়; বরং সমগ্র মানবজাতির জন্য এক বিশ্বজনীন শান্তির আহ্বান।
বুদ্ধদেবের জন্ম, বোধিলাভ ও মহাপরিনির্বাণ — এই তিন মহান ঘটনার পুণ্যস্মৃতি বিজড়িত মহামঙ্গল তিথি আজও আমাদের জীবন ও মননে নব প্রেরণার দীপ্তি ছড়িয়ে দেয়।
ত্রিপিটক : জ্ঞানের অবিনশ্বর সম্পদ
বৌদ্ধ ধর্মের মর্মমূলে রয়েছে মহান ত্রিপিটক।
ত্রিপিটক পাঠে আমরা পাই জীবন গড়ার নির্ভরযোগ্য দিকনির্দেশনা —
সূত্রপিটক শেখায় আচরণ ও নৈতিকতার পথ,
বিনয়পিটক দেখায় অনুশাসনের আদর্শ,
অভিধর্মপিটক উন্মোচন করে মন ও বাস্তবতার সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ।
ত্রিপিটকে বলা হয়েছে—
“মনই কর্মের মূল; মন দ্বারা সৃষ্টি হয় সুখ ও দুঃখ।”
এই চিরন্তন সত্য আজকের বৈষয়িক, অশান্ত বিশ্বে এক মহামন্ত্র হয়ে উঠতে পারে।
বুদ্ধের জীবন : ধ্যানে, প্রজ্ঞায় ও করুণায় দীপ্ত
ত্রিপিটকের আলোকে আমরা জানি — গৌতম বুদ্ধ ছিলেন মানুষের মুক্তির অগ্রদূত।
১. লুম্বিনীতে জন্ম,
২. বোধিবৃক্ষতলে বোধিলাভ,
৩. কুশীনগরে মহাপরিনির্বাণ —
তাঁর জীবন আমাদের শেখায়: জন্ম থেকে মুক্তি পর্যন্ত প্রতিটি পদক্ষেপেই রয়েছে সাধনা, করুণা ও প্রজ্ঞার অপরূপ সমাহার।
ত্রিপিটকের অন্তর্ভুক্ত ধম্মপদ গ্রন্থে তিনি বলেছেন—
“নিজেকে জয় করাই সর্বশ্রেষ্ঠ বিজয়।”
বুদ্ধ পূর্ণিমার তাৎপর্য : শান্তি ও মৈত্রীর প্রতিচ্ছবি
বুদ্ধ পূর্ণিমা কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়; এটি চেতনার জাগরণ।
এই দিনে আমরা প্রতিজ্ঞা করি—
অহিংসার পথ ধরে চলবো,
সকল প্রাণের প্রতি মৈত্রী ধারণ করবো,
মনের কলুষতা দূর করবো,
জ্ঞান ও সম্যক দৃষ্টিতে দীপ্ত হবো।
ত্রিপিটকের শিক্ষায় বলা হয়েছে—
পঞ্চশীল, অষ্টশীল, ধ্যান, দান এবং ধর্মপাঠের মাধ্যমে আমরা আত্মশুদ্ধির পথে এগিয়ে চলি।
ত্রিপিটকের শিক্ষা : আজকের বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে
আজকের সংকটময় বিশ্বে, যেখানে ধর্মীয় উগ্রতা, সহিংসতা ও বৈষম্য বেড়ে চলেছে, সেখানে বুদ্ধের শান্তির বাণী আরও অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
ত্রিপিটক আমাদের নির্দেশ দেয়—
স্বধর্ম পালনে অবিচল থাকতে,
পরধর্মে বিদ্বেষ না করতে,
ভিন্নমতের প্রতি সহনশীলতা বজায় রাখতে।
ত্রিপিটকের সূত্রপিটকে বলা হয়েছে—
“অন্যের দোষ অনুসন্ধানে নয়, নিজের মন-চেতনার শুদ্ধিতে নিয়োজিত হও।”
এই বাণী আজও আমাদের অন্তর্দর্শনের আহ্বান জানায়।
সকল ধর্মের মানুষের জন্য বুদ্ধের আহ্বান
বুদ্ধের দর্শন কোনো ধর্মীয় সীমায় আবদ্ধ নয়।
তিনি চেয়েছিলেন — মানুষ আগে হোক সৎ, বিনয়ী ও মমতাময়।
ত্রিপিটকে তিনি বলেছেন—
“বর্ণ বা জাতি নয়, কর্ম ও চরিত্রই প্রকৃত মানুষকে পরিচিত করে।”
এই পূর্ণিমায়, আমরা যে ধর্মেরই হই না কেন, বুদ্ধের চেতনায় একত্রিত হতে পারি—
সহানুভূতির বন্ধনে,
শান্তির আলিঙ্গনে,
মানবিক মহামিলনে।
উপসংহার : ত্রিপিটকের আলোয় এগিয়ে চলা
বুদ্ধ পূর্ণিমা আমাদের শুধু অতীত স্মরণ করায় না; বরং নতুন করে জীবন গড়ার, মন নির্মাণের এবং সমাজ সাজানোর অনুপ্রেরণা দেয়।
এই ২৫৬৯তম বুদ্ধাব্দে আসুন, আমরা প্রতিজ্ঞা করি—
“ত্রিপিটকের জ্ঞানকে আলোকবর্তিকা করে, অহিংসার পথে চলবো এবং সকল জীবের কল্যাণে নিবেদিত থাকবো।”
আমরা হই বোধির সন্তান,
আমরা হই প্রজ্ঞার দিশারী,
আমরা হই শান্তির বীজ বপনকারী।
শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা!
সব প্রাণী সুখী হোক।
উপস্থাপনায়:
প্রভাষক শুভংকর বড়ুয়া
পাতাবাড়ি, উখিয়া, কক্সবাজার।