পবিত্র মাহে রমজান আসার সঙ্গে সঙ্গে সিয়ামের পাশাপাশি শুরু হয় এক অদৃশ্য যুদ্ধ—জীবনযাত্রার ব্যয় বহন করা নাকি অভাবের সঙ্গে আপোস করা! উখিয়া উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন—রত্নাপালং, পালংখালী, হলদিয়াপালং, জালিয়াপালং ও রাজাপালং—এর সাধারণ মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন। নিত্যপণ্যের দাম এতটাই বেড়েছে যে নিম্ন আয়ের মানুষ রোজার সময় খাবার কিনবে, নাকি উপোস থাকবে—সে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছে!
বাজারে সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকার পরও এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিশেষ করে তেল, চিনি, ছোলা, ডাল, মসলা, চাল, কাঁচা মরিচ, লেবু, বেগুন, মুরগী ও মাংসের দাম প্রতিদিনই ঊর্ধ্বমুখী। নিম্ন আয়ের মানুষ, দিনমজুর, রিকশাচালক, শ্রমিক ও সাধারণ কর্মজীবীরা বাজারে গিয়ে হতাশ হয়ে ফিরছেন। রমজানে একটু ভালো খাবারের আশায় থাকা মানুষগুলো দিশেহারা!
বাজারে মানহীন, পুষ্টিহীন ও ভেজাল পণ্যের ছড়াছড়ি!
দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি আরেকটি ভয়ঙ্কর দিক হলো বাজারে নিম্নমানের, পুষ্টিহীন ও ভেজাল পণ্যের ছড়াছড়ি! উখিয়ার প্রতিটি বাজার— উখিয়া সদর (দারোগা বাজার) কোটবাজার, মরিচ্যা, কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালী, পালংখালী বাজারে নিম্নমান ও ভেজাল খাদ্যে সয়লাব।
✔ তেলের বোতলে আসল ব্র্যান্ডের মোড়ক, কিন্তু ভেতরে নিম্নমানের তেল।
✔ প্যাকেটজাত ছোলা, মসলা, চিনি, লবণ—সবকিছুতেই ভেজাল মেশানো হচ্ছে।
✔ মেয়াদোত্তীর্ণ ও নষ্ট খাবার পুনরায় বাজারে এনে বিক্রি করা হচ্ছে।
✔ নিম্নমানের দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য, যা শিশু ও বয়স্কদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
✔ রাসায়নিক মিশ্রিত ফলমূল, যা স্বাস্থ্যের জন্য ভয়ংকর হুমকি।
রমজানে স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ খাবার নিশ্চিত করার কথা থাকলেও বাজারের চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। প্রশাসনের নজরদারি না থাকলে ভেজালকারীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে, আর সাধারণ মানুষ ধীরে ধীরে বিষ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়বে!
কে দেবে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নিশ্চয়তা?
বাজারে আগুন, অথচ নিম্ন আয়ের মানুষের আয় অপরিবর্তিত। উখিয়ার ৫টি ইউনিয়নের অসংখ্য দিনমজুর সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খেটে যা পান, তা দিয়ে পরিবারের জন্য সামান্য খাবারও কেনা সম্ভব হচ্ছে না। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর লোভ ও স্বার্থপরতার কারণে রমজানের পবিত্রতা কলুষিত হচ্ছে, মানবিকতা লজ্জিত হচ্ছে।
সরকার, প্রশাসন, বাজার মনিটরিং টিম—সবাই যদি বাস্তব পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে অসাধু ব্যবসায়ীরা আরও দাপটের সঙ্গে সাধারণ মানুষকে নিঃস্ব করে ফেলবে!
সমাধান কী? বাজার মনিটরিং কঠোর করতে হবে!
রমজানে সাধারণ মানুষের জন্য ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হলে জরুরি ভিত্তিতে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
✅ উখিয়ার প্রতিটি ইউনিয়নে বাজার মনিটরিং টিম গঠন করতে হবে—উপজেলা প্রশাসন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে নিয়মিত বাজার তদারকি করতে হবে।
✅ প্রতিদিন নির্ধারিত মূল্যের তালিকা প্রকাশ ও তা অনুসরণ নিশ্চিত করতে হবে।
✅ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হবে—অতিরিক্ত দামে বিক্রি, ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য পাওয়া গেলে জরিমানা ও শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে।
✅ ভোক্তাদের অভিযোগ জানানোর জন্য হটলাইন চালু করতে হবে।
✅ বাজারে মানহীন ও ভেজাল পণ্য বিক্রি বন্ধে কঠোর অভিযান চালাতে হবে।
✅ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে নৈতিক ব্যবসার শপথ করাতে হবে।
রমজান মানে লুটপাট নয়, সংযম ও মানবিকতার চর্চা!
রমজান মাস ব্যবসায়ীদের জন্য শুধু লাভের মৌসুম হতে পারে না, এটি মানবিকতার পরীক্ষা। উখিয়ার প্রতিটি ইউনিয়নের মানুষ যদি রমজানে একটু স্বস্তি পায়, তবেই রমজানের প্রকৃত অর্থ বাস্তবায়িত হবে।
এখন প্রশ্ন হলো—উখিয়ার বাজারব্যবস্থা সাধারণ মানুষের জন্য সহনীয় করতে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাস্তব পদক্ষেপ নেবে, নাকি অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যই চলতে থাকবে?
সাধারণ মানুষ স্বস্তির বাজার চায়, নৈরাজ্য নয়! এখন সময়—সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার!
সচেতনতার প্রত্যাশায়,
প্রভাষক শুভংকর বড়ুয়া
পাতাবাড়ি, উখিয়া, কক্সবাজার।
100% sotti kotha sir..